Wednesday || May 1, 2024 Online Tech News Portal
img

করোনায় ইউরোপে যে ৬টি বিপজ্জনক রূপান্তর ঘটল

Posted on : 2020-05-15 06:31:21

News Source : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৫ মে, ২০২০ ১০:১১

করোনায় ইউরোপে যে ৬টি বিপজ্জনক রূপান্তর ঘটল

বিশ্বব্যাপী এখন একটাই আতঙ্কের নাম সেটি হচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। এর প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি।

এই ভাইরাসের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশটিতে মৃত্যু ও আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি।

এরপরই ইউরোপের দেশ ইতালি, ব্রিটেন, স্পেন ও ফ্রান্সের অবস্থান। তবে ইউরোপের শুধু এই কয়টি দেশই নয়, বরং করোনাভাইরাসের প্রভাবে এই ইউনিয়নের সবগুলো দেশেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এই ভাইরাসের প্রভাবে ইউরোপজুড়ে ৬টি নেতিবাচক রূপান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা ইউরোপের ভূ-রাজনীতিসচেতন বিশ্লেষকরা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের বিশ্বায়নবিরোধী চেতনা যা দীর্ঘদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল তা করোনাভাইরাসের কারণে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইউরোপের রাজনীতিকরা খুব ভালো করেই জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংরক্ষণশীল নীতিমালার কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। যুক্তরাজ্য তো ইতিমধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকর করে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্নই হয়ে গেছে এই প্রশ্নে।

ইউরোপের নতুন করে রূপান্তরিত হওয়ার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অর্থনীতি। উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে ইউরোপীয় অঞ্চলের শ্রমিকদের মজুরির পার্থক্যের বিষয়টিও একটা বড় কারণ। ইউরোপের অনেক বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানই তাদের কারখানা ইউরোপের বাইরে প্রতিষ্ঠা করছে। ইউরোপীয় সরবরাহ চেইনের স্বায়ত্তশাসন ওই অঞ্চলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই মানতে পারছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইনস্টিটিউটগুলো গত কয়েক দশক ধরেই সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে নিজেদের প্রভাব হারাচ্ছে। এতে ব্রাসেলসের ক্ষমতাও ক্রমশ কমে এসেছে, যা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় লক্ষ করা গেছে। ভাইরাস-সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলো কেমন অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ পাবে তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি ইউরোপের নেতৃত্ব। তারপরও ইউরোপিয়ান কমিশন ২৭ সদস্যকে একত্রিত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শুধু স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির কারণে নয়। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো কারণে ভেঙে পড়লে তা সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর জন্য খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ইউনিয়নভুক্ত সব রাষ্ট্রের সক্ষমতা এক নয়।

২০১৫ সাল থেকে ইউরোপ সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে অনেকটা কঠোর অবস্থানে চলে যায়। বিশেষ করে যখন থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নিতে শুরু করে তখন থেকেই ওই অঞ্চলের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তখন কিছু সরকার সেনঝেন এলাকার মধ্যেও সীমান্তে তল্লাশি-চৌকি বসায়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালার সঙ্গে যায় না। করোনাভাইরাসের এই সময়ে ইউরোপীয়দের মধ্যে বিদেশিদের প্রবেশ নিয়ে আরও ভীতি বেড়েছে সন্দেহাতীতভাবেই। ফলে গত মার্চে যখন ইইউভুক্ত কয়েকটি রাষ্ট্র তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, তখন ইউনিয়নের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব হয়নি। উল্টো কিছুদিনের মধ্যেই গোটা ইউরোপ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পৃথিবী থেকে।

ইউরোপে জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশের পক্ষে যে সংগঠন ও পার্টিগুলো দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, করোনাভাইরাস তাদের জন্য অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছে। ভাইরাস ইউরোপে প্রবেশের আগে সুইডেন পপুলিস্ট, জার্মানির এএফপি, যুক্তরাজ্যের নাইজেল ফারাজে ও ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা সরকারের গ্রিন পলিসির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল। কিন্তু ভাইরাস পরিস্থিতিতে ওই পার্টিগুলোই এখন ইউরোপকে টুকরো টুকরো করতে চাইছে। করোনার কারণে ইউরোজোনে উত্তর-দক্ষিণ উত্তেজনা শুরু হয়েছে, যা দশ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও তাদের উত্তরাঞ্চলীয় মিত্ররা দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোকে পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে নারাজ। আর এই দ্বন্দ্ব মেটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্যোগ নিলেও কোনও কার্যকর সমাধানে আসতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক