Friday || April 26, 2024 Online Tech News Portal
img

‘আম্ফান’ তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবন উপকূল

Posted on : 2020-05-21 07:42:32

News Source : ইত্তেফাক, ১২:০৬, ২১ মে, ২০২০

‘আম্ফান’ তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবন উপকূল

প্রায় ১১ বছর আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা। বুধবার সারা রাতব্যাপী প্রচণ্ড ঝড়ে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও তীব্র জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের। সড়কে বড় বড় ভাঙ্গা গাছ পড়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। আম্ফানের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে গোটা সুন্দরবন উপকূল।

বুধবার সন্ধ্যায় প্রবল গতিতে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। সারা রাত ধরে চলে এর তাণ্ডব। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই আবারো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলের খুলনার কয়রা, দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। খুলনা মহানগরীসহ এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তীব্র ঝড়ের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের সারা রাত কাটে কাটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাত ও জোয়ারের পানির তোড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোটো আংটিহারা বাকেরগাজীর বাড়ির পাশে শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ১২০ গজ বেড়িবাঁধ, আংটিহারা মজিদ গাজীর পাশে ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, জোড়সিং বাজারের পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, কপোতাক্ষ নদের চোরামোখা খেয়াঘাটের কাছে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ও গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের মাথায় কপোতাক্ষ নদের ৬০০ গজ বেড়িবাঁধ, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ৭০০ গজ বেড়িবাঁধ এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকাসহ ১০টি জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ উপচে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

এছাড়া ঝড়ে কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের ছোটবড়ো ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে কয়রা সদর ইউনিয়ন অফিসের টিন উড়ে গেছে। ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ।

‘আম্ফান’ তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবন উপকূল

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঝড়ে কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার লতা, দেলুটি, লস্কর, গোড়ইখালী সোলাদানাসহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি জায়গায় পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা বাড়িঘর লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য সাদা মাছ ও চিংড়ি ঘের। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে গাছপালা, কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে দাকোপ উপজেলার অনেক জায়গায় পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। বহু কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাট-বাজারের দোকান ঘরের টিন উড়ে গেছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, কয়রা উপজেলায় প্রায় ১৩-১৪টি জায়গায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শ্রী পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দাকোপ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। বহু কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরসহ অনেক হাট-বাজারের দোকান ঘরের টিন উড়ে গেছে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জাতীয়