Saturday || April 27, 2024 Online Tech News Portal
img

চিকিৎসা নিয়েও উদাসীনতা

Posted on : 2020-04-20 03:54:08

News Source : বাংলাদেশ প্রতিদিন, সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০

চিকিৎসা নিয়েও উদাসীনতা

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পরই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আলোচনায় রয়েছে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল। গত দেড় মাস ধরে এই হাসপাতাল প্রস্তুত বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কাছে পরাস্ত হয়েছে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে চেষ্টা করেও প্রস্তুত হতে পারছে না হাসপাতালটি। মাত্র কয়েকটি ভেন্টিলেটর মেশিন, আইসিইউ বেড দিয়েই দায় সেড়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। অথচ আইসিইউতে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের জন্য যে আলাদা অক্সিজেন প্লান্ট প্রয়োজন তার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আইসিইউতে এয়ার ফ্লো কন্ট্রোলের জন্য যে স্পেশাল ভেন্টিলেটর সিস্টেম প্রয়োজন তা নেই গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে। করোনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিতে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হয়নি এই হাসপাতালে। দেওয়া হয়নি কোনো ওয়াশিং মেশিনও। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ডরমিটরি প্রস্তুতির জন্যও কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ডরমেটরিতে লাগানো হয়নি পানির কল, ব্যবস্থা নেই হ্যান্ডওয়াশের। নেই স্যানিটাইজারও। হাসপাতালের ক্যান্টিন বন্ধ করে বাবুর্চিরা ভেগেছেন আগেই। বর্তমানে থাকা মাত্র দুজনের দ্বারা হাসপাতালের রোগী বা স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার তৈরি বা বণ্টন কোনোটাই সম্ভব নয়। ডাক্তারদের থাকার জন্য হোটেলের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হলেও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের কেউ এর কিছুই জানে না।

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিচালনার জন্য প্রয়োজন আড়াইশো থেকে তিনশ স্টাফ। কিন্তু বর্তমানে সেখানে স্টাফ আছে মাত্র ৭০ জন। তাই চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কোনো একজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হলে সংশ্লিষ্টদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠালে কার্যত অচল হয়ে পড়বে এই হাসপাতাল। সংকট আছে করোনা সংক্রান্ত পরীক্ষা নিয়েও। যে পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় সেই পিসিআর মেশিন চালানোর প্রয়োজনীয় রিজেন্ট দেওয়া হয়নি এ হাসপাতালটিতে। এমনকি নরমাল ব্লাডগ্রুপ ও অন্যান্য পরীক্ষার যে রিএজেন্ট প্রয়োজন সেটাও শেষ পর্যায়ে রয়েছে এই হাসপাতালের। হাসপাতালটির শীর্ষ এক কর্মকর্তার ভাষায়, ‘এখন দু-এক দিনের মধ্যে যদি হাসপাতালে করোনা রোগী আসা শুরু হয় তাহলে শুধু ধ্বংসলীলাই দেখবে দেশ। অথচ গত এক মাস ধরেই এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি।’ এই উদাসীনতা শুধু শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ক্ষেত্রেই নয়, সারা দেশের হাসপাতালগুলোই কম বেশি উদাসীনতার শিকার হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অপরিহার্য পিপিই নিয়ে সংকট এবং সরবরাহ করা পিপিইর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে শুরু থেকেই। দেশের অন্যতম জেলা কুমিল্লার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে আইসিইউর ১০টি বেড আছে। কিন্তু একটি ব্লাড গ্যাস এনালাইজার মেশিনের জন্য তা চালু করা যাচ্ছে না। অথচ ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে কুমিল্লার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের স্বল্প আয়ের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এর ওপর গত রবিবার পর্যন্ত কুমিল্লার ৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, কিছু যন্ত্রপাতি সংকটে আইসিইউ চালু করতে পারছি না। যন্ত্রপাতির চাহিদা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি বেশ আগেই।

অন্যদিকে, চলতি মাসেই শেরপুর জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে ৮ জনই স্বাস্থ্য বিভাগের। গত ৫ এপ্রিল শ্রীবর্দী হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়। কদিন পর ঝিনাইগাতি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার এরপর নালিতাবাড়ী হাসাপাতালে কর্মরত এক ব্র্যাককর্মীর শরীরে করোনার অস্তিত্ব মেলে। সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে পরীক্ষায় নকলা হাসপাতালের দুই তরুণ ডাক্তার, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী ও শেরপুর সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। খুব সাবধানে নিয়ম মেনে সরকারের দেওয়া পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরিধান করে কাজ করা এত সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কেন আক্রান্ত হচ্ছে-এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই জানিয়েছেন কোনো সিল সাপ্পর ছাড়া সরকারের সরবরাহকৃত পিপিই নিয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ পিপিইর সঙ্গে যে মাস্ক দেওয়া হয় তা অতি সাধারণ। পিপিই নিয়ে আরও বেশি সন্দেহ দেখা দেয় শুক্রবার দুজন ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও সিভিস সার্জন অফিসের কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার পর। কাল থেকে এই পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন বলেছেন, পিপিই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই পিপিই পরে কাজ করতে দ্বিধা করছে স্বাস্থ্য কমীরা। জেলার সিভিল সার্জন এ কে এম আনওয়ারুল রউফ জানিয়েছেন, সরকার দিয়েছে আমাদের কী করার আছে। সরকার যা ভালো মনে করে তাই করতে হবে।

জাতীয়