Thursday || March 28, 2024 Online Tech News Portal
img

খাদ্য সহায়তা নিয়ে বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসন

Posted on : 2020-05-03 05:20:23

News Source : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৩ মে, ২০২০ ১০:২৭

খাদ্য সহায়তা নিয়ে বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসন

একটি পরিবার আগামী দিন কি খাবে সে জোগাড় নেই, রান্নার খাদ্য সামগ্রী নেই, ক্রয়ের সামর্থ্যও নেই। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তালিকায়ও হয়তো তাদের নাম উঠে নাই, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এমন সব পরিবার খুঁজে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন।

করোনা ভাইরাসে ঘরবন্দি অসহায় শ্রমজীবী মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিতে সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগটির নাম “সুপ্রতিবেশী”। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে করোনা মহামারীতে সমাজের এক ধনী পরিবার অন্য এক দরিদ্র পরিবারের খাদ্য সামগ্রীর দিয়ে সহায়তা করবে। জেলা প্রশাসনের আহবানে সাড়া দিয়ে সমাজের সামর্থবান যে কোন ব্যক্তি এক বা একাধিক পরিবারে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার দ্বায়িত্ব নিতে পারবেন। ওই ব্যক্তির দেওয়া অর্থ দিয়ে জেলা প্রশাসন চাল, ডাল, তেল, লবনসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কিনে ঘরবন্দি অসহায় পরিবারের বাড়িতে পৌঁছে দিবে।
ইতোমধ্যে এই মহতি উদ্যোগ থেকে সহায়তা পেয়েছেন গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৬৫০টি পরিবার।

জেলা শহরের পাওয়ার হাউজ রোডের এক বাবুর্চি মো. খলিলের সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, হঠাৎ করে মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই সালাম জানালেন। তার পর বললেন আপনি কি মো. খলিল। আমি বললাম হ্যাঁ। তখন ওপাশ থেকে বললেন আমরা আপনার বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আপনার বাড়ির অপেক্ষা করছি। বের হয়ে নিয়ে যান। আমি অনেকটা খুশি মনে যেয়ে দেখি একটি গাড়ি। পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোক। তিনি খাবারের ব্যাগ হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আমাকে বললেন আমি ডিসি অফিসের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আপনাকে দিতে এসেছি। পরে আমি ব্যাগটি নিয়ে ঘরে এসে খুলে দেখি তার মধ্যে অনেক খাদ্য সমগ্রী।

খাদ্য সমগ্রীর মধ্যে ছিল ১ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ প্যাকেট লবন, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, এক প্যাকেট শুকনা মরিচ ও একটি সাবান। যা আমার পরিবারের প্রায় এক সপ্তাহের খাবার। এই খাদ্য না পেলে হয়তো ছেলে মেয়ে নিয়ে আমার না খেয়ে থাকতে হতো। এই সময় কেউ কেউকে সাহায্য সহযোগীতা করছে না। ডিসি সাহেব আমাকে যে উপকার করেছেন তার ঋণ কোন দিনও শোধ করতে পারবো না।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মাহাবুবুল আলম জানিয়েছেন, জেলা গত ৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশাসনের সুপ্রতিবেশী কর্মসূচীতে গোপালগঞ্জের ৩৩জন বিত্তবান ৬ লাখ ৬০হাজার ৫০০টাকা জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯২৫টাকা খরচ করে ৮০৭টি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই ফান্ডে ৩৩হাজার ৫৭৫টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।

তিনি আরো জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রামণে যেসব কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ, সেনাবাহির সদস্য, ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণ মাঠে ময়দানে কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন এবং কারা ত্রাণ পেয়েছে বা পায়নি এমন খবর রাখেন। অনেক পারিবার তাদের কাছে ত্রাণ পায়নি বা পরিবারের অভাব অটনের ঘটনা বলেন। সেসব ব্যক্তিরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানালে আমারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সেসব বাড়িতে সুপ্রতিবেশী কর্মসূচীর আওতায় খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়ে থাকি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। যাতে করে জেলায় কোন মানুষ অভুক্ত না থাকে। আমরা একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলায় অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের দান সমাজে গোপন রাখতে চান। আবার অনেকে পরিবেশনের ঝামেলা এড়াতে গোপনে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিতে চান। কেউ আছেন সহায়তা চাইতে জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাইতে লজ্জাবোধ করেন।

এসব বিষয় চিন্তা করে আমরা “সুপ্রতিবেশী” উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে আমরা ৩৩টি পরিবার পেয়েছি, যারা ইতোমধ্যে ৮০৭টি পরিবারের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। এই ৩৩ জনের দেয়া অর্থ দিয়ে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করে কর্মহীন অসহায় পরিবারের বাড়িতে গিয়ে পৌছে দেওয়া হয়েছে। তিনি সুপ্রতিবেশীর মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের ঘরবন্দি অসহায় পরিবারে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের দ্বায়িত্ব নেওয়ার আহবান জানান। তাহলে সমাজের একটি লোকও না খেয়ে থাকবেনা। তাই আমি সমাজের বিত্তবানদের এই কর্মসূচীতে আগ্রহ দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয়