Friday || March 29, 2024 Online Tech News Portal
img

অবশেষে কঠোর হলো পুলিশ

Posted on : 2020-05-18 07:16:47

News Source : আমাদের সময়, ১৮ মে ২০২০ ০০:০০ | আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ১১:১০

অবশেষে কঠোর হলো পুলিশ

বছর ঘুরে আবারও দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে এবারের ঈদপূর্ব চিত্র একবারেই ভিন্ন। নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। লাখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত রাখতে প্রতিবছর দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবার উল্টো অবস্থানে আছে; করোনার বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশে চাইছে বাড়িমুখো মানুষের ঢল ঠেকাতে।

এর পরও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে নানা উপায়ে গ্রামে ছুটছে মানুষ। এতে তৈরি হচ্ছে সংক্রমণ বিস্তারের মারাত্মক ঝুঁকি। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যাত্রী ও যান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশবাহিনী। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সব ইউনিটপ্রধানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

সূত্রের খবর, এখনো ঈদের সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়িমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। সঙ্গত কারণেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের। ঈদে বাড়িফেরা মানুষের ঢল থামাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেও। ইতোমধ্যে ঢাকার সবগুলো ক্রাইম ও ট্রাফিক ডিভিশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল থেকে ঢাকার চারপাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ/বাহির পথে ১০-১২টি চেকপোস্টে স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনো যানবাহন অথবা মানুষজন ঢাকায় ঢুকতে অথবা বের হতে পারবে না। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মীর রেজাউল আলম আমাদের সময়কে বলেন, কেউ যেন ঢাকার বাইরে যেতে না পারেন এবং বাইরে থেকে কেউ যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার একটি ট্র্যাডিশন আছে। কিন্তু এবার সে বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা আমরা বাস্তবায়ন করব। আমরা আশা করব, প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে আসবেন না। তবে জরুরি পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে, জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের আগে ও পরের ছুটিকালীন লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ সময়কালে দেশের সাধারণ মানুষকে ঘরে রেখে করোনা ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ঈদের আগে ও পরের কয়েকটি দিনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে এই সময়ে চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পক্ষে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারণী মহল।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ঈদ উপলক্ষে সড়কে কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। চেকপোস্টসহ প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে এখন সাধারণ মানুষও জানেন। আশা করি তারা নিজ থেকেই বাইরে আসবেন না।

এদিকে গত দুদিন ধরে মাওয়া ঘাট পেরিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। বাহন হিসেবে তারা ফেরি ব্যবহার করছেন। এ ক্ষেত্রে থাকছে না স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বালাই। এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফেরিতে এভাবে পারাপারের সুযোগ আর থাকছে না। এ বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) আশরাফুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, আজ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফেরিতে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি আজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।

গতকাল রবিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী পুলিশের মাঠপর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয় এ অনলাইন কনফারেন্সে। এ সময় জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে পুলিশের যেসব দেশপ্রেমিক বীর সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন আইজিপি।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে হাসিমুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, নিচ্ছেন। অনেক সদস্য ইতোমধ্যেই করোনাক্রান্ত হয়েছেন। দেশপ্রেমিক এসব ত্যাগী পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও কল্যাণে সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে এমন সব দেশের পলিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পলিসিসহ বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনার আলোকে পুলিশ সদস্যের জন্য একটি অত্যন্ত আধুনিক এসওপি (স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর) তৈরি করে সেটি সব ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। এ নির্দেশনাটি যথাযথভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দেন আইজিপি।

দায়িত্ব পালনকালে নিজেদের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন আইজিপি। বলেন, দেশ ও মানুষের সেবা একটি বিরল সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থায়ীভাবে আসন করে নিতে হবে। পাশাপাশি জনসেবার এ অভূতপূর্ব ধারা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান পুলিশপ্রধান।

জাতীয়