Friday || April 26, 2024 Online Tech News Portal
img

ট্রাম্পের ‘উহান ল্যাব তত্ত্ব’ কতটুকু সত্য?

Posted on : 2020-05-12 04:04:20

News Source : ইত্তেফাক, ০৯:২২, ১২ মে, ২০২০

ট্রাম্পের ‘উহান ল্যাব তত্ত্ব’ কতটুকু সত্য?

করোনা ভাইরাসের উত্পত্তি নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আর প্রশ্নের শেষ নেই। এই ভাইরাস প্রাকৃতিক নাকি মানব সৃষ্ট তার একটা সঠিক উত্তর জানতে আগ্রহী সবাই। বছরের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে ‘উহান ভাইরাস’ বলেছিলেন। কেউ কেউ তার পক্ষে সাফাই গেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন আবার কেউ কেউ তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

কয়েকটি দেশের নামকরা গবেষকরাও বলেছিলেন যে করোনা ভাইরাস আসলে চীনই ছড়িয়েছে কিংবা এর পেছনে চীনের হাত রয়েছে। মোটকথা, সবার অভিযোগ ছিল চীনের বিরুদ্ধে। অপরদিকে চীনও বসে থাকেনি। ক্ষণে ক্ষণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছে।

ট্রাম্পের তত্ত্বের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও ফক্স নিউজ। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছিল ভিন্ন কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে সংস্থাকে ‘চীনকেন্দ্রিক’ আখ্যা দিয়ে অর্থ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এই ভাইরাসের সংক্রমণে যখন আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল তীব্রগতিতে বাড়ছিল তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পম্পেও পৃথক বিবৃতিতে বলেন যে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে চীনের গবেষণাগার থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। এবং প্রমাণিত হলে চীনকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই বাকযুদ্ধের মধ্যে ঘি ঢেলেছে ক্যাঙ্গারুর দেশ অস্ট্রেলিয়া।

গত মাসের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পিয়েনে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার বিষয়টি এখন বড়ো প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রাদুর্ভাব কীভাবে হলো এবং কীভাবে ছড়ালো সে বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম অস্ত্রমিত্র হলো আমেরিকা। তদন্তের দাবি তুলে দেশটি চীনের রোষানলে পড়েছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। ফলে ক্যানবেরায় কয়েকটি পণ্য রপ্তানি বন্ধের হুমকি দেয় বেইজিং। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার দাবি তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের কথা বলেছে যেটা চীনের জন্য দরকার, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নয়। অভিযোগ আর পালটা অভিযোগ রূপ নিয়েছে ত্রিদেশীয় বাকযুদ্ধে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এভাবে বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া কারো জন্যই মঙ্গল নয়।

শুরু থেকে এই পর্যন্ত তাদের বক্তব্য থেকে পিছু হটেনি ট্রাম্প প্রশাসন। উহানের ভাইরাস গবেষণাগার ‘ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি’ থেকেই কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। ইতালি, স্পেন ও নিউইয়র্কে মৃত্যুর হার কমলেও এবার বিশ্বের নতুন হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে ইউরোপের দেশ রাশিয়া। যেখানে এরই মধ্যে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। করোনার বিশ্বের প্রথম হটস্পট উহান ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। চীন ব্যবসা করে যাচ্ছে তাদের আগের নিয়মেই। তাই সন্দেহের তীরটা তাদের দিকেই।

বছরের শুরুর দিকে এই ভাইরাস সবার কাছে প্রাকৃতিক মনে হলেও বর্তমানে এর গতিবিধি দেখে মানুষের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে যেভাবে কুপোকাত করে চলছে তাতে এই ভাইরাসকে একেবারে প্রাকৃতিক বলা যায় না। মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয় ট্রাম্পের ‘উহান ল্যাব তত্ত্ব’ আদতে কি সত্য? তাই বিশ্লেষকদের মতে, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। যাতে বিশ্ববাসী নিশ্চিত হতে পারে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উত্পত্তি সম্পর্কে। তদন্তের দাবি শুধু অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নয়, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থাও তদন্তের পক্ষে।

এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) তদন্তের পক্ষে মত প্রকাশ করেছে। পহেলা মে এএফপিকে পাঠানো ই-মেইলে সংস্থাটির মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেন,‘পশু থেকে ভাইরাসটির উত্পত্তি নিয়ে চীন সরকারের তদন্তে অংশ নেওয়ার আহ্বানে সাড়া দিতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ডব্লিউএইচও।’ কিন্তু চীন এতদিন বলে আসছিল যে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে চীনে ঢুকতে দিবে না। দিন দিন বৈশ্বিক চাপ বাড়ায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে চীন।

গত বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈশ্বিক এই করোনা মহামারির বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্যানেলকে তারা সমর্থন করে। প্যানেলকে সব ধরনের সহায়তা দেবে চীন। ফলে তদন্তের পথে আর কোনো বাধা থাকল না। এই তদন্ত হলে পুরো বিষয়টা বিশ্বের মানসপটে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে এটি প্রাকৃতিক ভাইরাস নাকি মানুষের তৈরি বায়োলজিকাল ওয়েপন (জীবাণু অস্ত্র)।

ট্রাম্পের ‘উহান ল্যাব তত্ত্ব’ সত্য প্রমাণিত হলে চীনকে হয়তো আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। আর যদি চীনের দাবি সত্য হয় তবে দোষারোপকারীদের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে পারবে চীন। বিশ্ব দর্পণেও সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। জনমনের কৌতূহল ঘেরা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পেতেও একটি স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,

আন্তর্জাতিক