Saturday || April 27, 2024 Online Tech News Portal
img

একটি ‘বৃহৎ পরিবার’ বলেই ভুটানে মৃত্যু নেই!

Posted on : 2020-05-23 05:41:18

News Source : মানবজমিন, অনলাইন ২৩ মে ২০২০, শনিবার, ৯:৪৮

একটি ‘বৃহৎ পরিবার’ বলেই ভুটানে মৃত্যু নেই!

এখনো ক্রিজে টিকে আছে হিমালয় দুহিতা ভুটান। ভূবেষ্টিত এই দেশটি বিশ্বের কাছে এক রোল মডেল । করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভুটানে কেউ মারা যায়নি। তাই দেশটির শীর্ষ দৈনিক কুয়েন্সেল তার অনলাইন প্রচ্ছদে এই অঞ্চলের আক্রান্তদের তথ্য দিয়ে চলছে। যেখানে ভুটানের নাম নেই। তারা লিখেছে , করোনা রোগী এই অঞ্চলে: ভারত এক লাখ ৬ হাজার ৪৭৫, সিঙ্গাপুর ২৮ হাজার ৭৯৪, বাংলাদেশ ২৫ হাজার ১২১, থাইল্যান্ড ৩০৩৩ এবং নেপাল ৪০২।

অবশ্য গোটা অঞ্চলের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের থেকে অন্যরা অনেক ভালো অবস্থানে আছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালদ্বীপে করোনা রোগী ১২০৪ এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯১ জন। মারা গেছেন ৪ জন।

ভুটানে করোনা রোগী ২১ জন। প্রতিবেশী মিয়ানমারও উদ্বেগজনক অবস্থানে এখনো নেই। তাদের করোনা রোগী ২০৬ জন । সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৮ জন। মারা গেছেন ৬ জন। যদি মনে করা যেতে পারে জান্তা শাসিত দেশটি যথেষ্ট তথ্য লুকানোর সুযোগ রেখেছে। শ্রীলংকাও অনেক ভালো অবস্থানে। শ্রীলংকাতেও মোট রোগী ১০৫৫ এবং মারা গেছেন মাত্র ৯ জন। নেপালে মারা গেছেন ৩ জন।

এই অঞ্চলের পাঁচটি দেশে মোট মৃতের সংখ্যা মাত্র ২৮ জন নির্দেশ করছে যে, সবটাই ছোট দেশ কিংবা জনসংখ্যা কম বলেই খাটো করে দেখা যাবে না। ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার দিকটিকে উপেক্ষা করা যাবে না। এগুলোর কোনোটিই উন্নত নয়। এসব দেশের ক্ষমতাসীন নেতারা অবশ্য তাই বলে গর্ব করেন না। বলেন না যে, যুক্তরাষ্ট্র বা অমুক অমুক দেশের থেকে ভালো আছি।

ভুটান সত্যি বিশ্বের বিস্ময়। তাদের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ২২ মে এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, বিশ্ব কিভাবে দেখছে ভুটানকে । এই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিশ্ববাসীর চোখ ভুটানের উপর। তারা দেখছে ভুটান কি করে মোকাবেলা করছে । চলতি সপ্তাহে বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে , ভুটান কি করে সাফল্যের সঙ্গে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে ।

গত সোমবার ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসে ব্যারোনেস বাসকোম্বে ভুটানের রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ভুটান যেভাবে কোভিড–১৯ মোকাবেলা করছে, তার দক্ষতার প্রশংসা করেন। ভুটানকে অভিনন্দন জানান। ভুটানবাসির নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে ব্যরোনেস বলেন, মাই লর্ডস, আমি ভুটানের রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং তার জনগণকেও । কারণ তারা এই ভাইরাস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে ।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যখন এই ধরনের স্বীকৃতি আমাদেরকে একটা সুখানুভূতি এনে দেয়। কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না যে, এটা আমাদের সামনে আরো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে । কারণ এখনও কেরোনা বিরোধী লড়াই শেষ হয়ে যায়নি । আমাদেরকে আরো অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে হবে । আমাদেরকে যেটা অবশ্যই বুঝতে হবে, ভুটানকে বিশ্ববাসী কেন প্রশংসা করছে, তার কারণ বহু দেশ ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এবং সেসব দেশে করোনাভাইরাস এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভুটানবাসীর সৌভাগ্য যে ভুটানের সিংহাসনে এক সদাশয় বিচক্ষণ রাজা রয়েছেন। তিনি এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্মরণকালের ইতিহাসে এরকমের মরণঘাতী ব্যাধি মোকাবেলার কোনো নজির বিশ্বের কাছে নেই।

একইসঙ্গে পত্রিকাটি বলেছে, এটা এমন একটা সময় যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত রয়েছেন এবং তারা তাদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। আর তাই অনেকেই মনে করেন, নেতৃত্বদান গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাসী তাই সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। আর সেকারণেই আজ বিশ্ববাসী শ্রদ্ধার চোখে ভুটানের চোখে চোখ রাখছে। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, কি করে সম্পদের অপ্রতুলতা এবং নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা ভুটান করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাফল্যের পরিচয় দিতে পেরেছে । এটা সম্ভব হয়েছে তার কারণ যেকোন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ভুটান এক জাতি এক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছে । যেন গোটা জাতি একটি বৃহৎ পরিবার।

পত্রিকাটি এরপর বলেছে, সামনের দিনগুলোতে আমাদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা হচ্ছে বিদেশ প্রত্যাগতদের নিয়ন্ত্রণ। যেসব দেশ করোনা আক্রান্ত, সেসব দেশ থেকে যারা আমাদের দেশে ফিরে আসবে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই হলো ভুটানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ । কিন্তু অবশ্যই আমাদেরকে বর্তমানের চেতনায় সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে হবে।

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বিপদসঙ্কুল সীমান্ত দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রবেশ সবথেকে বড় ঝুঁকি ভুটানের সামনে ।

আমাদের অবশ্য শক্তিশালী সার্ভিলেন্স পদ্ধতি রয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এর উপর আমরা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে পারি না। সে কারণে ব্যক্তি যিনি আক্রান্ত হবেন, তার সততা এবং নৈতিকতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । পত্রিকাটি বলেছে, আপনি যদি সীমান্ত পেরিয়ে কোথাও ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই টেস্ট সেন্টারে যেতে হবে। এবং আপনার ভ্রমণ বৃত্তান্ত প্রকাশ করতে হবে। তাহলে আপনাকে খুঁজে বের করা সহজ হবে। এমনকি সংক্রমণের বিস্তার রোধের ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে। পত্রিকাটি বলেছে, আজ আমাদের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে এবং আমাদেরকে এই ধারা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। আমরা এমন কিছু করবো না, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে একটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভুটান খাদ্য ঘটতি নিয়ে চিন্তিত। কারণ তাদের খাদ্যসামগ্রীর সিংহভাগই ভারত ও বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। কুয়েনসেল অন্য একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, সীমান্তের ওপারের উৎসগুলোতে ঝুকি তৈরি হলে আমরা কি খাব, সেটা ভাবতে হবে এখনই।

আন্তর্জাতিক