Thursday || March 28, 2024 Online Tech News Portal
img

হু’র নির্দেশনা মানা হচ্ছে না

Posted on : 2020-05-03 05:40:03

News Source : ইত্তেফাক, ০২:০৬, ০৩ মে, ২০২০

হু’র নির্দেশনা মানা হচ্ছে না

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা মানা হচ্ছে না। এতে চিকিত্সা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক জানান, একজন ডাক্তারের সঙ্গে তিন জন নার্স এবং ৫ জন হেলথ ফোর্স (হেলথ টেকনোলজিস্ট, আয়া, সুইপার প্রমুখ) থাকতে হয়।

এটাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। যা সারাবিশ্বকে মেনে চলার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই নীতিমালা মানা হলেও কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নীতিমালা বাংলাদেশে উপেক্ষিত। এ কারণে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা সুচিকিত্সা পাচ্ছেন না। করোনা মোকাবেলা করতে হিশশিম খেতে হচ্ছে। দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির এটি অন্যতম কারণ। দ্রুত এই অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।

জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নীতিমালা মেনে চলার জন্য কয়েক দফা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশেনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা আমলে নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধিকাংশ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়িত হয় না। এনেসথেসিওলজিস্টদের পক্ষ থেকে বারবার আরো ৫০০ এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ আইসিইউ ম্যানেজমেন্ট এনেসথেসিওলজিস্টদের ওপর নির্ভরশীল। যা মেডিক্যাল অফিসার পারেন না। তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। করোনা চিকিত্সার জন্য কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে কোভিড-১৯ হাসপাতালে আইসিইউয়ে চিকিত্সা সেবা দেওয়ার জন্য। যা আত্মঘাতি কাজ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা দাবি করেন।

এদিকে করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই হয়রানি, বরখাস্ত, বদলি ও শোকজ করায় চিকিত্সকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি রোগীদের চিকিত্সা করতে অপারগতার অভিযোগ এনে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিত্সককে সাময়িক বরখাস্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যে চিকিত্সক দায়িত্ব পালন করছিলেন তাকে যেমন কোনো কিছু না জানিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে, তেমনি যিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন তাকেও বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের এমন বালখিল্যতার কারণে রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার পর নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় সম্প্রতি তিনজন ডাক্তারকে হয়রানিমূলক বদলি ও শোকজ করা হয়েছে। খুলনা থেকে একজনকে বরিশালে বদলি করা হয়েছে। পরে তাকে পাবনার মানসিক হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের ডাক্তার নিম্নমানের মাস্ক নিয়ে কথা বলার কারণে তাকে শোকজ করা হয়েছে। যারা নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই সরবরাহ করেছে এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা বহাল তবিয়তে আছেন। আর ডাক্তারদের অকারণে হয়রানি করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন: চাকরি বাঁচাতে মরিয়া পোশাকশ্রমিকরা

অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতি ও অনিয়মে যারা জড়িত তারা বহাল তবিয়তে আছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মচারী ২০০ কোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা জড়িত না থাকলে এটা সম্ভব হতো? অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আফজালের সঙ্গে জড়িত ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, করোনাকালে চিকিত্সকদের হয়রানি, বরখাস্ত ও শোকজ করার ঘটনাটি অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ। এমনিতে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি, তারপরও হয়রানি-এটা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, ডাক্তারদের উত্সাহিত না করে নিরুত্সাহিত করছে একটি চক্র। এটি পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। এরমধ্যে চিকিত্সকদের হয়রানিমূলক কার্যক্রম উদ্দেশ্যেমূলক বলেও জানিয়ে তারা বলেন, এর ফলে চিকিত্সা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যিনি করোনা মোকাবেলা কার্যক্রমের সাথে জড়িত, তার অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড বিএনপি-জামায়াত ঘরানার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ওই কর্মকর্তা বৃহত্তর ফরিদপুরের একটি জেলার জেলা প্রশাসক ছিলেন। হাওয়া ভবনেও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। তিনিসহ সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এমন ৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের হাইকমান্ডের কাছে সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিত্সকদের বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, এতে চিকিত্সকদের মধ্যে উত্সাহ বেড়ে গেছে। তবে নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ায় ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এই মুহূর্তে ডাক্তারদের নিরুত্সাহিত করে লাভ হবে না। ডাক্তারদের উত্সাহ দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ডাক্তাররা ঝুঁকিতে ডিউটি করছেন। তাদের উত্সাহ দেওয়া উচিত। হুমকি-ধামকি দিয়ে লাভ হবে না। হয়রানি বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কাজ পিছিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনেসথেসিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, আইসিইউ ব্যবস্থাপনা এনেসথেসিওলজিস্ট ছাড়া সম্ভব না। আমরা অনেক আগেই আরো ৫০০ এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগের সুপারিশ করেছি। এটা নিয়োগ দেওয়া হলে করোনায় মৃত্যুহার কমে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, ৫০০ এনেসথেসিওলজিস্ট ও ১২শ’ টেকনোলজিস্ট নিয়োগের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিএমএ মহাসচিব. ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, এখন ডাক্তারদের উত্সাহ দিতে হবে। চিকিত্সকদের হয়রানি করে মনোবল ভেঙ্গে দিলে চিকিত্সা সেবা ব্যাহত হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত, তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কীভাবে!

আন্তর্জাতিক