Posted on : 2020-04-26 05:19:11
News Source : যুগান্তর, ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নভেল করোনাভাইরাসের সব নতুন ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিকস ও চিকিৎসাসেবা বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই সমতার ভিত্তিতে সহজলভ্য করতে হবে। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গতি বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিষয়ে শুক্রবার এক অনলাইন সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ট্রেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
এদিকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা, এর কার্যকর ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে ডব্লিউএইচও’র বৈশ্বিক উদ্যোগে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু এতে সায় দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ৪ মে বিশ্বব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ফুসফুসের এই রোগটি সবার জন্য সাধারণ হুমকি; এটিকে আমরা পরাজিত করতে পারি একটি উপায় অবলম্বন করে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, যখন নতুন কোনো কিছু তৈরি হয়; তখন সেটি সবার জন্য সমানভাবে সহজলভ্য হয় না। আমরা এটা ঘটতে দিতে পারি না।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বৈশ্বিক উদ্যোগের কথা জানিয়ে ট্রেড্রোস আধানম বলেন, গোটা বিশ্বই যখন এই ভাইরাসের হুমকিতে তখন সম্মিলিত পথেই একে মোকাবিলার স্বার্থেই বৈশ্বিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বৈশ্বিক এ উদ্যোগের সঙ্গে তারা নেই।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, আমরা এখন জি সেভেন ও জি-২০ এর সব দেশগুলোকে এই উদ্যোগের পেছনে সক্রিয় করা শুরু করব। আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রামাফোসা বলেন, আফ্রিকা অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো না। এই অঞ্চল ভাইরাসের সংক্রমণের কাছে একেবারে অরক্ষিত এবং এর সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, ডায়াগনস্টিকস এবং চিকিৎসাসেবা আবিষ্কারের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মে মাসের শুরুর দিকে বৈশ্বিক সাড়ে ৭ বিলিয়ন ইউরো তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা প্রথম ধাপ মাত্র, ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু দরকার হবে।
ওই ভিডিও কনফারেন্সে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর নেতারাও অংশ নিয়েছেন। তবে যোগ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি একটি ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে দু’জনের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। এলিসা গ্রানাতু নামে এক বিজ্ঞানী প্রথম ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন। আরও প্রায় ৮০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
অক্সফোর্ড অধ্যাপক সারা গিলবার্ট এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে ইবোলার প্রতিষেধক তৈরির কাজ করেছিলেন তিনি। গিলবার্ট বলেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধক কাজ করবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি এটিই প্রথম ভ্যাকসিন।
জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি করোনার একটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সবুজ সংকেত পেয়েছে। জার্মানির সরকারের অনুমোদন পাওয়ায় শিগগিরই করোনার এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ ২০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান বলেছেন, এটি একটি ভালো লক্ষণ যে, জার্মানিতে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা এগিয়ে চলছে। আমরা ভ্যাকসিনটির প্রথম পরীক্ষা চালাতে পারি।
৪ মে করোনা ভ্যাকসিন শীর্ষ সম্মেলনের ডাক : আগামী ৪ মে বিশ্বব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক টুইট বার্তায় বলেন, করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘একসঙ্গে এগিয়ে আসতে’ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ওই সম্মেলনের আয়োজন।
ওই সম্মেলনের অন্য অংশীদাররা হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরব, নরওয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনি বলেন, রোগব্যাধির কোনো সীমানা নেই। তাই আমাদের সবারই করোনা প্রতিষেধক তৈরি নিশ্চিত করতে এবং ভ্যাকসিন তৈরির জন্য জোটবদ্ধ হয়ে তহবিল গঠন করতে হবে।